একমালিকানা ব্যবসায়ের উপযুক্ত ক্ষেত্রসমূহ

নবম-দশম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - ব্যবসায় উদ্যোগ - মালিকানার ভিত্তিতে ব্যবসায় | | NCTB BOOK
15

একমালিকানা ব্যবসায় প্রাচীনতম ব্যবসায় হিসেবে বিশ্বের অনুন্নত, উন্নয়নশীল ও উন্নত সকল দেশেই স্বীকৃত। প্রাচীনতম ব্যবসায় হলেও বর্তমান বৃহদায়তন ব্যবসায়ের সাথে প্রতিযোগিতা করে এখনও সবচেয়ে জনপ্রিয় ব্যবসায় হিসেবে টিকে আছে। একমালিকানা ব্যবসায়ে এমন কিছু বৈশিষ্ট্য ও সুবিধা আছে যে কারণে এ জাতীয় ব্যবসায় সকলের নিকট জনপ্রিয়। একমালিকানা ব্যবসায়ের উপযুক্ত ক্ষেত্রসমূহ বর্ণনা করা হলো :

১. অনেকে আছেন যাদের হাতে পর্যাপ্ত অর্থ নেই অথচ ব্যবসায় শুরু করতে আগ্রহী। আত্মকর্মসংস্থানে উদ্যোগী এমন হাজার হাজার লোকের জন্য একমালিকানা ব্যবসায় সবচেয়ে উপযুক্ত। যেমন- চায়ের দোকান, ছোট খাবারের দোকান, কুটির শিল্পের দোকান, মৃৎ শিল্পের দোকান।

২. এমন কিছু ব্যবসায় আছে যেগুলোর জন্য বেশি অর্থের প্রয়োজন পড়ে না। সে জাতীয় ব্যবসায়ের জন্য একমালিকানা ব্যবসায়ই সবচেয়ে বেশি উপযোগী বিবেচিত হয়। যেমন- পানের দোকান,  সবজির দোকান ।

৩. যে সকল ব্যবসায়ে ঝুঁকি একেবারেই কম সেগুলোর জন্য একমালিকানা ব্যবসায় বেশি উপযুক্ত। কেননা কম আয়ের ব্যক্তিরা সাধারণত ঝুঁকি এড়িয়ে চলতে চান, ফলে তারা এমন ব্যবসায়ই বেশি পছন্দ করেন। যেমন- চালের দোকান, ঔষধের দোকান।

৪. কিছু কিছু ব্যবসায় আছে যেগুলোর প্রদত্ত পণ্য বা সেবার চাহিদা বিশেষ বিশেষ এলাকা বা নির্দিষ্ট শ্রেণির গ্রাহকদের নিকট সীমাবদ্ধ। সে সব পণ্য বা সেবার ক্ষেত্রে একমালিকানা ব্যবসায় বেশি উপযুক্ত। যেমন- স্কুলের সামনে বই- খাতার দোকান, কোনো শিল্প কারখানার সামনে রেস্টুরেন্ট।

৫. পঁচনশীল জাতীয় পণ্য যেমন ফল-মূল, শাক-সবজি, মাছ-মাংস ইত্যাদির ব্যবসায় সাধারণত একমালিকানা ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত হয়ে থাকে।

৬. ডাক্তারি, প্রকৌশল ও আইন ব্যবসায়ের মতো ক্ষুদ্র আকারের পেশাভিত্তিক ব্যবসায় এবং প্রত্যক্ষ সেবাধর্মী ব্যবসায় যেমন লন্ড্রি, সেলুন, বিউটি পার্লার ইত্যাদি সাধারণত একমালিকানার ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত হয়ে থাকে।

৭. অনেক পণ্য আছে যেগুলোর চাহিদা ক্রেতাদের পরিবর্তনশীল রুচি, আগ্রহ ও ফ্যাশনের উপর নির্ভরশীল। সে সকল পণ্যের ব্যবসায়ের ক্ষেত্রেও একমালিকানা ব্যবসায় বেশি উপযুক্ত। যেমন-দরজির দোকান ।

৮. যে সব ব্যবসায় প্রদত্ত পণ্য-দ্রব্য ও সেবার সাথে ব্যক্তির বা মালিকের নৈপুণ্য, শিল্পকর্ম ও সুনাম জড়িত থাকে সেগুলোর জন্য একমালিকানা ব্যবসায় বেশি উপযুক্ত। যেমন-চিত্রকর্মের দোকান, ছবি তোলার দোকান, স্বর্ণকারের দোকান, ফার্নিচারের দোকান, মিষ্টির দোকান।

৯. কৃষিজাত পণ্য ও সহায়ক পণ্যের ব্যবসার জন্যও একমালিকানা ব্যবসায় বেশি উপযুক্ত। যেমন- ধান ব্যবসায়, আলু ব্যবসায় ও কাঁচামালের ব্যবসায়।

১০. স্থানীয় বা জাতীয় পর্যায়ের বই, খাতা-পত্র, পত্রিকা ইত্যাদি প্রকাশনা ব্যবসায়ের জন্য একক মালিকানাভিত্তিক ব্যবসায় বেশি উপযুক্ত।

উপরোক্ত বিশ্লেষণ থেকে বোঝা যাচ্ছে যে, ব্যক্তিগত উদ্যোগ, স্বাধীনচেতা মনোভাব, স্বল্প পুঁজি ও স্বল্প শ্রম বিনিয়োগ করে একমালিকানা ব্যবসায় যে কোনো সময় যে কোনো স্থানে শুরু করা যায়। এ ব্যবসায় আইনি জটিলতামুক্ত এবং এতে ঝুঁকিও কম। অন্যদিকে একমালিকানা ব্যবসায় ভোক্তাদের অত্যন্ত নিকটে থেকে তাদের পছন্দ ও রুচি অনুযায়ী পণ্য বা সেবা প্রদান করতে পারে। ফলে প্রাচীন ব্যবসায় সংগঠন হওয়া সত্ত্বেও একমালিকানা ব্যবসায়ের উপযুক্ত ক্ষেত্র যেমন ব্যাপক, তেমনি সকলের নিকট এ ব্যবসায়ের জনপ্রিয়তাও বেশি। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক অবস্থা বিবেচনায় একমালিকানা ব্যবসায় সবচেয়ে বেশি উপযোগী। যার কারণে বাংলাদেশের বর্তমান মোট ব্যবসায় সংগঠনের শতকরা আশি ভাগেরও বেশি একমালিকানার ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত। তবে দেশে বিরাজমান বেকারত্ব দূরীকরণে কর্মসংস্থানের নতুন ক্ষেত্র তৈরির লক্ষ্যে যুবসমাজকে একমালিকানা ব্যবসায়ে উদ্বুদ্ধ করতে ঋণ পাওয়া সহজ করাসহ আরো সরকারি সহযোগিতা প্রয়োজন।

Content added By
Promotion